• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

বেরিয়ে আসছে বিমানের কেবিন ক্রুদের অনিয়মের চাঞ্চল্যকর তথ্য 

প্রকাশ:  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৫৯ | আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৫৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন কোটি টাকার স্বর্ণ ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাসহ বিমানের কেবিন ক্রু রুহুল আমিন শুভ আটকের পর বেরিয়ে আসছে সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিমানের ক্যাজুয়াল কেবিন ক্রু থেকে ভিভিআইপি ক্রু হিসেবেও কাজ করতেন তিনি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্বর্ণ চোরাকারবারী হিসেবে শুভ কাজ করে আসছিলেন। জেদ্দা বিমানবন্দরে তাকে আটকের পর একে একে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।

জানা যায়, তৎকালীন ম্যানেজার রঞ্জুর তত্ত্বাবধানে বিমানের ভিভিআইপি কেবিন ক্রু নির্বাচন হতো। তার পছন্দের লোকদের দিয়ে এই কাজ করাতেন। প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সুবিধাও ভোগ করতেন বলে জানা যায়। রঞ্জুর সময় লন্ডনের এক ফ্লাইটে এফএস সিনহা তৎকালীন বিমানের ক্যাজুয়াল ক্রু নাবিলাকে ধর্ষন করেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে তদন্ত করে সেটি প্রমাণিতও হয়। এফএস সিনহা তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এর আত্মীয় হওয়ার কারণে সেই বিচার বেশি দূর এগুয়নি। এই রাষ্ট্র বিরোধী বিচারপতি এসকে সিনহার সুপারিশে ফ্লাইট সার্ভিস ম্যানেজার রঞ্জু এফ.এস সিনহাকে ভিভিআইপি ফ্লাইটে নির্বাচিত করেন।

সম্পর্কিত খবর

    বিভিন্ন সময় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে কাস্টমস কর্তৃক আটক হয়ে ট্যাক্স প্রদান করা বহু ক্রুর তালিকা ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে বলে জানা যায়। বিমান কর্তৃপক্ষও অবহিত আছেন। জানা যায়, এদের বিভিন্ন জন এ ধরনের অপরাধ করতে গিয়ে একাধিকবার ধরা পড়েছেন। এরা বিদেশ থেকে কমার্শিয়াল আইটেমসহ বিভিন্ন মেডিসিন ও ড্রাগস দেশে বহন করে আসছিলেন।

    যাদের বিরুদ্ধে এসব অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে, তাদের মধ্যে সিপি নিশি, জে.পি মুগনি, জে.পি তাইফুর, এফ.এস.এস আদিবা, এফ.এস.এস সুলতানা, এফ.এস.এস সুরভী, এফ.এস রাজন, এফ.এস রাফিন, এফ.এস আবু তায়েব, এফ.এস আহসানুল, এফ.এস আকাশ, এফ.এস শেহজাদ, এফ.এস সাদমান, এফ.এস.এস তমা, এফ.এস.এস আভা, এফ.এস.এস মায়া, এফ.এস মহিউদ্দিন, এফ.এস সাবাব, এফ.এস আতাহার, এফ.এস শিশির, এফ.এস প্রতিক, এফ.এস.এস মিতু, এফ.এস.এস সাবিহা উল্লেখ্যযোগ্য। কাস্টমস তালিকায় এরা আছে।

    অভিযোগ আছে, বিমানের কেবিন ক্রু আবু তায়েব ও আহসানুল জেপি রিটন দীর্ঘদিন ধরে বাইরে থেকে কার্গো ব্যবসা করে আসছেন। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন কমার্শিয়াল আইটেম এবং মেডিসিন আনে। পরবর্তীতে এই ব্যবসার লাভের টাকা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট দ্স্তগীর এর মাধ্যমে তারা সমঝোতা করে। সাংবাদিক বিমান অফিসে জানতে চায় ক্রুরা এই ব্যবসা করতে পারে কিনা? অফিস জানায় এ ধরনের ব্যবসা ক্রুদের করতে পারে না। জেপি রিটন এবং জেপি তাইফুর এই অবৈধ ব্যবসা করে আজ প্রচুর সম্পদের মালিক। ঢাকা শহরে প্রচুর ফ্ল্যাট এবং প্লটের মালিক তারা। এই অবৈধ ব্যবসার জন্য আবু তায়েব, আহসানুল এবং জেপি রিটন, জেপি তাইফুর বিমানের আরেক ক্রু জেপি আফসানের কাছে ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে লাভ দেওয়ার কথা বলে, পরবর্তীতে তারা কোন‌ টাকা না দিয়ে চেক দিয়ে রেখেছে এখনো মূল টাকাই দিচ্ছে না। এ নিয়ে জেপি আফসান মামলায় যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে। এরই মধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে জেদ্দার কাস্টমস। গত বিজি ৪০৩৫ ফ্লাইটে বিমানের ক্রুদের বিশেষভাবে আলাদা চেক হয় কাস্টমস কর্তৃক। এবং সেখানে ক্রুদের জিজ্ঞাসা করা হয় এই ফ্লাইটে আবু তায়েব, মহিউদ্দিন ও মিনহাজ নামের ক্রু এসেছে কিনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ফ্লাইটের একজন‌ সিনিয়র ক্রু জানান, কাস্টমস বারবার আবু তায়েব, মহিউদ্দিন এবং মিনহাজ এর নামে কেউ আছে কিনা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জানা যায় এদের বিরুদ্ধে অবৈধ ড্রাগস চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে। এরা বাংলাদেশ থেকে মাদক বিদেশে সরবরাহ করতো এবং বিদেশ থেকে বিভিন্ন ওষুধ দেশে অবৈধভাবে আনতো।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত দশজন ক্রু জানিয়েছেন, তাদের দিয়ে এফ.এস আহসানুলের বন্ধু নূর হোসেন নামক একজন ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ড দিয়ে হুন্ডি, ড্রাগস এবং কমার্শিয়াল ব্যবসা করাতে বাধ্য করিয়ে কমিশন নিয়েছে। এই অবৈধ ব্যবসার সাথে এফ.এস ওমর ফারুক নামে এক ক্রু জড়িত ছিলো বলে জানা যায়। ভুক্তভোগী কেবিন ক্রুরা এসব নিয়ে বিমানে লিখিত অভিযোগ করতে চাইলে তাদের কন্ট্রাক্ট রিনিউয়াল হবে না বলে হুমকী এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আহসানুল, আবু তায়েব ও ওমর ফারুক। বিমান ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত ক্রু জেপি তাইফুর ও জেপি বিপন বহুবার ড্রাগস এবং গোল্ডসহ ধরা পড়েছেন। উল্লেখ্য যে, জেপি বিপন দুবাই থেকে ঢাকা গামী বিজি০৪৮ ফ্লাইটে ল্যাপটপের ভিতরে গোল্ডের বার আনার সময় দুবাই কাস্টমস কর্তৃক আটক হয় এবং ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। এ সময়ে ইউনিয়ন সভাপতি দস্তগীর ও ম্যানেজার রঞ্জুর সহেযাগীতায় বিষয়টি ধামাচাপা হয় তখনি। তবে এর পূর্বেও জেপি তাইফুর ও জেপি বিপন বিপুল পরিমানে মেডিসিন ও ড্রাগস নিয়ে ধরা পড়ার অভিযোগে চাকুরীচ্যুত হয় । যদিও তারা মামলা করে ফিরে আসেন।

    করোনাকালীন সময়ে যখন বিমানের কঠিন সময় যাচ্ছিল তখনো এফ.এস আবু তায়েবের নেতৃত্বে প্রায় ৪০ জন ক্রু ফ্লাইট অপারেট করতে অপরাগতা জানিয়ে বিমানকে চিঠি দেন। পরবর্তীতে বিমান আবু তায়েব গং কে ৪ মাস গ্রাউন্ডেড রাখে।

    বিমানের যে ইউনিয়ন রয়েছে সেখানকার কোন্দলের কারণে সাধারন কেবিন ক্রুরা সব সব সময় হয়রানীর স্বীকার হয়ে আসছেন। এর ফলে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, তৎকালীন ডি.এ. জিয়াউদ্দিন অত্যন্ত সৎ এবং নির্ভীক হওয়ায় তার সময় এসব অপকর্ম ছিলো না বললেই চলে। তিনি দুদকের মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই আবার মাথাচারা দিয়ে ওঠে অপরাধীরা। ফ্লাইট সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে এর অ্যাসিটেন্ট ম্যানেজার শাকিলের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে সত্যতা আছে বলে জানান। ইউনিয়নের বর্তমান এবং বিরোধী পক্ষে যারা রয়েছেন তারাও এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

    পূর্বপশ্চিম-এনই

    বিমানের কেবিন ক্রু
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close